অনুমান (Estimation)

কোন কিছুকে সরাসরি না মেপে সে সম্বন্ধে আন্দাজ করে বলতে পারাকে অনুমান বলে। তােমাকে স্কাউট পদ্ধতিতে কোন কিছুর দূরত্ব, উচ্চতা, ওজন, পরিমাণ ও সংখ্যা অনুমান করে বের করতে হবে। এগুলাে সবসময় নিয়ম মত অভ্যাস করতে হবে। স্কাউট হিসেবে তােমার ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের মাপ-লম্বা, চওড়া, ওজন ইত্যাদি জানা দরকার। তােমার শরীরের উচ্চতা, হাতের (কনুই থেকে মাঝের আঙুলের ডগা পর্যন্ত) মাপ, বিঘৎ, আঙুলের মাপ, লাঠির মাপ, কলমের মাপ ইত্যাদি জানা থাকলে কোন জিনিসের মাপ সম্পর্কে সঠিক অনুমান করতে অসুবিধে হয় না। নিচে অনুমান করার কয়েকটি সাধারণ পদ্ধতি দেয়া হল।


জ্যামিতিক পদ্ধতি :

জ্যামিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে দূরত্ব মাপা যায়। দূরত্ব মাপার জন্য ধরা যাক ক থেকে খ এর দূরত্ব মাপতে হবে। খ নদীর এপার এবং ক ওপারে। খ-এ দাড়িয়ে ক এর দিকে লক্ষ্য কর। ক-এর জায়গায় কোন গাছ বা অন্য কোন স্থির বস্তুকে ঠিক করে নাও।

খ থেকে ডান বা বামদিকে সুবিধামত ঘুরে নদীর পাড় দিয়ে এগুতে থাক। ৫০ গজ যাওয়ার পর একটি লাঠি গ স্থানে পুঁতে রাখো। আবার গ থেকে আর ২৫ গজ এগিয়ে ঘ স্থানে আর একটি লাঠি পোঁত। তারপর বাম অথবা ডান দিকে (নদীর উল্টা দিকে) সমকোণ ঘুরে সামনের দিকে যাও। এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে যেখানে থেকে গ এর উপর দিয়ে ক পর্যন্ত বরাবর একটি সরল রেখা টানা যায়। তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছ তা ঙ। এখন ঙ থেকে ঘ-এর দূরত্ব মাপ। মনে কর ২০০ গজ। একে ২ দিয়ে গুণ করলে খ থেকে ক-এর দূরত্ব পাওয়া যাবে। অর্থাৎ নদীর চওড়ার মাপ বের করা যাবে।


ইঞ্চি থেকে ফুট

উচ্চতা মাপার অনেকগুলাে পদ্ধতি আছে। তার মধ্যে একটি সহজ পদ্ধতি হল ‘ইঞ্চি থেকে ফুট’ পদ্ধতি।

ধরো, কোন একটি গাছের উচ্চতা মাপতে হবে। অর্থাৎ খ থেকে ক পর্যন্ত মাপতে হবে। গাছের মাথাকে ‘ক’ বলো। গাছের গােড়া থেকে সুবিধা মত যে কোন দিকে তােমার স্কাউট লাঠি দিয়ে (লাঠিতে ইঞ্চি, ফুট দাগ থাকা ভাল) ১১ লাঠি মেপে যাও এবং সেখানে একটি কাঠি পোঁত। সেখানে থেকে আরও এক লাঠি মেপে যাও এবং সে জায়গাটি চিহ্নিত কর। একে ‘ঙ’ বল । এবার পাশ ফিরে মাটিতে শুয়ে উপরের চোখ বন্ধ করে নিচের চোখ দিয়ে দেখ। ৬ থেকে গাছের আগা ক পর্যন্ত মনে মনে একটা লাইন টানলে লাঠির যে জায়গা দিয়ে লাইনটি গেল তাকে ঘ বল। লাঠির গােড়াকে গ বল । এখন গ ঘ-এর উচ্চতা যত ইঞ্চি, গাছের উচ্চতা তত ফুট হবে।


ছায়া পদ্ধতি

উচ্চতা মাপার একটি সহজ পদ্ধতি হল ছায়া পদ্ধতি। এটা রােদ থাকলে করা যায়। তােমার লাঠি রােদে খাড়া করে ধরো। তারপর এর ছায়া মাপ। মনে কর লাঠি ৩ মিটার আর ছায়া ৬ মিটার। এখন গাছের ছায়ার মাপ মনে কর ৩০ মিটার। এবার সাধারণ ঐকিক নিয়মে গাছের উচ্চতা হবেঃ

৬ মিটার ছায়া হলে গাছের উচ্চতা = ৩ মিটার

১ মিটার ছায়া হলে গাছের উচ্চতা = ৩÷৬ মিটার

৩০ মিটার ছায়া হলে গাছের উচ্চতা = (৩০×৩) ÷ ৬ = ১৫ মিটার

অর্থাৎ গাছের উচ্চতা ১৫ মিটার।

পরবর্তী দক্ষতা ব্যাজে দূরত্ব, উচ্চতা, ওজন, সংখ্যা প্রভৃতি বের করার আরও পদ্ধতি জানতে পারবে।


ওজন অনুমান

একটি নির্দিষ্ট বস্তু বা খণ্ড হাতে নিয়ে তার ওজন বলতে পার। যেমন : এক কেজি আলু অথবা চাল তােমার হাতে দেওয়া হলাে। তুমি কিন্তু জান না এখানে কি পরিমান আলু বা চাল রয়েছে, অনুমান করে বলতে হবে এখানে ৮০০ গ্রাম বা ৯০০ গ্রাম অথবা ১,০০০ গ্রাম আলু বা চাল আছে।

ওজন অনুমানের সহজ উপায়, এক কেজি ওজনের আটা/লবনের প্যাকেট হাতে নাও এবং যে জিনিসটির ওজন অনুমান করতে হবে তাও হাতে নাও। দুই থেকে তিনবার এক হাতে অন্য হাতে পরিবর্তন কর এবং আটা, লবন এর সাথে যে জিনিসটির ওজন পার্থক্য অনুমান করবে তার ওজন তুলনা কর এবং বলো।

বিকল্প নিয়ম হতে পারে একটি বলে/বালতির এক তিন অংশ পানি নাও এবং নির্দিষ্ট ওজন কর, একটি বস্তু বা খণ্ড একটি পাতিলের মধ্যে রেখে বালতির পানিতে রাখ, পাতিলে স্পর্শ পানির সীমানা চিহ্নিত কর। আবার ওজন না জানার বস্তু বা খণ্ডটি পূনরায় পাতিলে রাখ এবং বালতির পানিতে রাখ, আগের চিহ্নের সাথে এবারের স্পর্শ চিহ্নের পার্থক্য তুলনা কর এবং ওজন অনুমান করে বল। প্রকৃত ওজনের সাথে অনুমানের সামান্য তারতম্য হতে পারে, তবে নিয়মিত অভ্যাসের মাধ্যমে তা কমিয়ে আনা সম্ভব।


0 0 votes
Article Rating
guest
65 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments