দড়ির কাজ

সদস্য ব্যাজ – এ তােমরা দড়ির যত্ন, হুইপিং, থাম্ব নট, রীফ নট, ক্লোভহিচ ও বােলাইন শিখেছ। এবার তােমাকে ল্যাশিং শিখতে হবে। দু বা তিনটা লাঠি বা বাঁশ শক্ত করে এক সঙ্গে বাঁধতে হলে দড়ির কতগুলাে বিশেষ প্যাঁচ দরকার। এ প্যাঁচকে ল্যাশিং বলে। সাধারণত পুল, ঘর, মাচান বা গ্যাজেট তৈরি করার সময় ল্যাশিংয়ের ব্যবহার করা হয়। স্কাউট স্ট্যান্ডার্ড ব্যাজ অর্জনের জন্য গেরাের পাশাপাশি যে দুটি ল্যাশিং শিখতে হয় তাদের নাম –

  • স্কয়ার ল্যাশিং ও
  • ডায়াগােনাল ল্যাশিং।

১. ওয়ান রাউন্ড টার্ন এন্ড টু হাফ হিচেস (ONE ROUND TURN AND TWO HALF HITCHES) বা তাঁবু গেরাে : দড়ির চলমান অংশ দিয়ে কোন খুঁটিতে দুইবার প্যাঁচ দাও। খুঁটিতে দুইবার প্যাঁচ দেয়ার পরে দড়ির দু প্রান্তকে দু হাতে ধরলে তা হবে একটি পূর্ন প্যাঁচ বা একটি টার্ন। এবার দড়ির চলমান প্রান্ত দিয়ে দড়ির স্থির অংশের। অল্প দূরে দূরে দুইটি হাফ হিচ দাও। এভাবে রাউন্ড টার্ন এন্ড টু হাফ হিচেস বা তাঁবু গেরাে (ROUND TURN AND TWO HALF HITCHES) বাঁধতে হয়। তাঁবুর পেগের সাথে তাঁবুর গাই লাইন বা গাই রােপ বাঁধার জন্য এই হিচ ব্যবহার করা হয়।

অনুশীলন : যখনই সুযােগ আসে, তখনই গেরাে বাঁধার চেষ্টা করে গেরােগুলােকে চর্চা করা যায় ও মনে রাখা যায়।

২. শিট বেন্ড (SHEET BEND) বা পাল গেরাে : একটি দড়ির এক প্রান্তে লুপ করে বাম হাতে ধর। এবার ডান হাতে একটি সরু দড়ির প্রান্তভাগ মােটা লুপের নিচের দিক থেকে উপরে তােল। তার পর মােটা দড়ির সাথে প্যাঁচ দিয়ে সরু দড়িটিকে তার নিচের লুপের মূল অংশের নিচে ঢুকিয়ে দাও। লক্ষ্য রাখতে হবে এ সময় সরু দড়ির প্রান্তটি যেন লুপের ওপরে থাকে। এরপর সরু দড়ির স্থির অংশকে আস্তে আস্তে টানলে শিটব্যান্ড বা পাল গেরাে তৈরি হয়ে যাবে। এইভাবে শিটবেন্ড বা পাল গেরাে বাঁধতে হয়। মােটা দড়ির সাথে সরু দড়ি বাঁধতে, নৌকার পাল বাধঁতে, পতাকার রশি ও পতাকাদন্ডের রশি একত্রে বাঁধতে এই গেরাে ব্যবহৃত হয়।

৩. টিম্বার হিচ (TIMBER HITCH) বা গুড়ি টানা গেরাে : দড়ির অংশ দিয়ে গাছের গুড়ি বা অন্য কোন নির্দিষ্ট বস্তুকে একবার প্যাঁচ দাও। এভাবে হাফ হিচ দেওয়া শেষ হলে দড়ির চলমান প্রান্ত দিয়ে মূল দড়ির অংশে অন্ততপক্ষে ৫-৭ বার প্যাঁচিয়ে দাও। এভাবে টিম্বার হিচ বা গুড়ি টানা গেরাে বাঁধতে হয়। চিত্র: (ক ও খ অনুযায়ী) কেলিক দিয়ে বস্তুটিকে সােজা রাখা হয় যাতে সে অল্প জায়গা নিয়ে যেতে পারে।

যদি কোন লম্বা বস্তুকে টেনে আনার জন্য টিম্বার হিচ বা গুড়ি টানা গেরাে ব্যবহার করতে হয়। তাহলে সেই বস্তুর সাথে প্রথমে টিম্বার হিচ বা গুড়ি টানা গেরাে বেঁধে তারপর একটি লুপ তৈরি করে ঐ লুপটি তার সামনে অংশে ঢুকিয়ে দাও। এই লুপকে কেলিক বলে। (খ চিত্র অনুযায়ী) কোন বােঝা বা ভারি গাছের টুকরাে টেনে আনার জন্য টিম্বার হিচ ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া ডায়াগােনাল ল্যাশিং বাঁধার আগে এই হিচ দিয়ে দিয়ে ল্যাশিং শুরু করতে হয়।


৪. স্কয়ার ল্যাশিং (SQUARE LASHING) : একটি বাঁশ বা দণ্ডকে মাটির ওপর খাড়াভাবে রাখ। এভাবে প্রথম বাঁশ বা দণ্ডটি রেখে অন্য একটি বাঁশ বা দণ্ডকে আগের বাঁশ বা দণ্ডের ওপর আড়াআড়িভাবে রাখ। যে বাঁশ বা দণ্ডকে মাটির ওপর খাড়াভাবে রাখা হয়েছে সেটি হচ্ছে ‘পােল’ এবং পােলের ওপরে যে বাঁশ বা দণ্ডকে আড়াআড়িভাবে রাখা হয়েছে সেটি হচ্ছে বার। এবার ‘পােল’ এবং ‘বার’ যেখানে মিলিত হয়েছে তার নিচের অংশের পােলে একটি ক্লোভ হিচ বা বঁড়শি গেরাে বাঁধ। এবার ঐ দড়ির চলমান অংশকে ‘বারের’ ওপর দিয়ে ‘পােলকে’ পিছন দিক থেকে প্যাঁচিয়ে আবার বারের ওপর রাখ। এরপর দড়ির চলমান অংশকে আবার পােলকে পিছন দিক থেকে প্যাঁচিয়ে আবার বারের ওপর রাখ। এভাবে অন্ততপক্ষে ৩-৫ বার আগের বর্ণনা অনুযায়ী দড়ির চলমান অংশ দিয়ে পােল এবং বারকে জড়িয়ে প্যাঁচাতে হবে। ‘পােলকে’ প্যাঁচানাের সময় দড়িকে ‘পােলের’ নিচে এবং ওপরের প্রথমে যে দুইটি প্যাচ দেওয়া হয়েছিল পরবর্তী প্যাচঁগুলো এই দুইটির মধ্যে রাখতে হবে, যাতে আস্তে আস্তে পােলের এই অংশের ফাঁক বন্ধ হয়ে যায়। বর্ণনা অনুযায়ী ‘পােল’ এবং বারকে ৩- ৫ বার প্যাঁচান শেষ হলে দড়ির চলমান অংশ দিয়ে ‘পপাল’ এবং বারের মাঝে যে দড়ি আছে তাকে শক্ত করে অন্ততপক্ষে ৩-৪ বার পেঁচিয়ে যাও | দড়ির এই অংশকে দড়ির চলমান অংশ দিয়ে প্যাঁচানোকে ফ্র্যাপিং (FRAPPING) বলে। ফ্র্যাপিং যত শক্ত হবে ল্যাশিং তত মজবুত বা শক্ত হবে।

ফ্র্যাপিং দেওয়া শেষ হলে দড়ির চলমান অংশ দিয়ে ‘বারে’ ক্লোভ হিচ বা বঁড়শি গেরাে বেঁধে ল্যাশিং শেষ কর। এভাবে স্কয়ার ল্যাশিং বাঁধতে হয়। মাটির ওপর খাড়াভাবে রাখা একটি বাঁশ বা দণ্ডকে তার ওপর আড়াআড়িভাবে বা প্রায় আড়াআড়িভাবে রাখা অপর একটি বাঁশ বা দণ্ডকে বাঁধার জন্য স্কয়ার ল্যাশিং ব্যবহার করা হয়। (নিচের চিত্র অনুযায়ী)।

৫. ডায়াগােনাল ল্যাশিং (DIAGONAL LASHING) : একটি বাঁশ বা দণ্ডকে অপর একটি বাঁশ বা দণ্ডের ওপর কোণাকুণিভাবে বা প্রায় কোণাকুণিভাবে (গুণন চিহ্নের মত) অবস্থায় রাখ। এভাবে রাখার ফলে দুটি বাঁশ বা দণ্ড যেখানে মিলবে সেখানে দুটি বাঁশ বা দণ্ডকে একত্র করে একটি টিম্বার হিচ (TIMBER HITCH) বা গুঁড়ি টানা গেরাে বাঁধ। এবার দড়ির চলমান অংশের দিক পরিবর্তন করে অর্থাৎ দড়ির চলমান অংশকে বাইরের দিকে নিয়ে দুই বাঁশ বা দণ্ডকে একত্র করে ৫-৭ বার প্যাঁচ দাও। এরপর যে দিক থেকে আগে প্যাঁচিয়েছ তার উল্টো দিক থেকে বাঁশ দুটোকে একত্র করে আগের মত ৫-৭ বার প্যাঁচ দাও। এভাবে দুইদিক দিয়ে প্যাঁচানো শেষ হলে বাঁশ বা দণ্ডের মাঝে দড়ির যে অংশ আছে তাকে দড়ির চলমান অংশ দিয়ে শক্ত করে অন্ততপক্ষে ৩-৪ বার প্যাঁচ বা ফ্রাপিং দাও।

ফ্র্যাপিং দেওয়া শেষ হলে যে কোন একটি বাঁশ বা দণ্ডের সঙ্গে দড়ির চলমান অংশ দিয়ে ক্লোভ হিচ বেঁধে ল্যাশিং শেষ কর। এভাবে ডায়াগােনাল ল্যাশিং বাঁধতে হয় (নিমের চিত্র অনুযায়ী)।

অনুশীলন : একটি বাঁশ বা দণ্ডকে অপর একটি বাঁশ বা দণ্ডের উপর কোণাকুণিভাবে বা প্রায় কোণাকুণিভাবে রেখে বাঁধার জন্য ডায়াগােনাল ল্যাশিং ব্যবহার করা হয়।


0 0 votes
Article Rating
guest
64 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments