হিন্দু ধর্ম

সদস্য ব্যাজ স্তরে ইতােপূর্বে তােমরা ধর্মতত্ত্ব, বিশ্বাস, আচার, অনুষ্ঠান, ঈশ্বরবাদ, আত্মা, ঈশ্বর, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাজ স্তরে নিত্যকর্ম, অবতারবাদ, ঈশ্বর অবতারের পার্থক্য, কয়েকজন অবতারের কথা, কর্মবাদ, নিষ্কাম কর্ম, প্রােগ্রেস ব্যাজ স্তরে পূজার্চনা, পূজার বিধি, পূজার উপাচার, নারায়ণ পূজা, গনেশ পূজা, লক্ষ্মী পূজা, স্বরস্বতী পূজা সম্পর্কে শিখেছ এবং ব্যক্তি জীবনে তা চর্চা করে যাচ্ছ। এই স্তরে নিমােক্ত বিষয় সম্পর্কে শিখবে ও অনুশীলন করবে।

কর্মযােগ : কর্ম, জ্ঞান ও ভক্তি এ তিনটি ধর্ম সাধনের সাধারণ অঙ্গ। এ তিনটিতে সিদ্ধ হলে ধর্ম লাভ পূর্ণাঙ্গ হয়। তাই এদের প্রত্যেকটিকে বলে যােগ, মানে সাধনার উপায়। কর্মযোেগ হলাে সাধনার একটি উপায়। কর্ম মানে স্বকর্ম। যার যে কাজ তাই তার স্বকর্ম। কবি বলেছেন- “কর কর্ম হবে জয়”। তুমি একমনে তােমার কর্তব্য করে যাও, তবেই সাফল্য লাভ করবে। এ কর্তব্যকর্মই হচ্ছে স্বকর্ম। স্বকর্ম হচ্ছে নিষ্কাম কর্ম। কাজ করার আগেই মনে রাখবে কাজটি ঈশ্বরের কাজ। ঈশ্বর তােমাকে দিয়ে করাচ্ছেন, তুমি করে যাচ্ছ। ফলাফলের দায়িত্ব তােমার নেই।

জ্ঞানযােগ : জ্ঞানযােগ সাধনার দ্বিতীয় মার্গ বা স্তর। লােকের হিত এবং ঈশ্বরের প্রীতির জন্য যা কর্তব্য তা-ই হচ্ছে জ্ঞান। জ্ঞানজনিত কৰ্মই হল জ্ঞানযােগ । জ্ঞানযােগে কর্তার হৃদয়ে ঈশ্বর ভাব জেগে ওঠে। কর্তা ক্রমশ প্রত্যেকের মধ্যে যে ঈশ্বর আছেন, তা মনে প্রাণে উপলব্ধি করতে পারেন। অতএব স্বধর্ম বা নিজ কর্তব্য পালনকর্তার নিজের হিতের জন্য, অন্যের হিতের জন্য। জ্ঞানী নিজেকে অকর্তা জেনে পরব্রক্ষ্মকে জেনে মুক্তিলাভ করেন।

ভক্তিযােগ : সাধনার তৃতীয়পথ ভক্তিমাগ। কর্মমার্গের ফল-নিষ্কাম কর্ম সম্পাদন। জ্ঞানমার্গের ফল-জনকল্যাণ ও ঈশ্বরের প্রীতির জন্য নিষ্কাম কর্ম সম্পাদন। আর যিনি ঈশ্বরে চিত্ত স্থির করে লােকহিতার্থ ও লােকশিক্ষার জন্য সর্বদা অভ্যস্ত নিষ্কাম কর্ম করতে থাকেন, তিনিই ভক্তির সাধনা করেন। যিনি ভক্তি সাধনা করেন তিনিই ভক্ত। জ্ঞানী কর্ম করেন লােকহিতার্ত ও ঈশ্বরের প্রীতির জন্য। কিন্তু ভক্তিমার্গের অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। ভক্ত সর্বজীবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব উপলব্ধি করেন, কেবল ঈশ্বরের হিতার্থ কাজ করেন। এ পর্যন্ত তিনি লােকহিতার্থ যে কাজ করে আসছেন আজ তা ঈশ্বরের কাজ। ঈশ্বর ও ঈশ্বরের প্রীতির জন্য এখন ভক্তের এই কর্তব্য।

দশবিধ সংস্কার : সমগ্র জীবনে যে সকল মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান করা হয় সেগুলােকে বলা হয় সংস্কার। স্মৃতি শাস্ত্রে সংস্কারের উল্লেখ আছে। নিম্নে দশবিধ সংস্কারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেয়া হল :

১। গর্ভাধান : গর্ভসঞ্চারের মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানকে বলা হয় গর্ভাধান।

২। পুংসবন : পুত্র সন্তান কামনা করে যে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান করা হয়, তাকে পুংসবন বলা হয়।

৩। সীমন্তোন্নয়ন : গর্ভধারনের পর ষষ্ঠ বা অষ্টম মাসে সীমান্তোন্নয়ন করা হয়।

৪। জাতকর্ম : জন্মের পর পিতা যব, যষ্টিমধু ও ঘৃতদ্বারা সন্তানের জিহ্বা স্পর্শ করে মন্ত্রোচারন করেন জাতকর্ম সংস্কারে।

৫। নামকরণ : সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার দশম, একাদশ, দ্বাদশ ও ত্রয়ােদশতম দিবসে নামকরন করণীয়।

৬। অন্নপ্রাশন : পুত্রের ষষ্ঠ মাসে এবং কন্যার পঞ্চম, অষ্টম বা দশম মাসে পূজাদি মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথম অন্নভোেজনের নাম অন্নপ্রাসন।

৭। চূড়াকরন : গর্ভাবস্থায় সন্তানের মস্তকে যে কেশ উৎপন্ন হয় তা মুন্ডনের নাম চূড়াকরণ।

৮। উপনয়ন : উপনয়ন শব্দের অর্থ নিকটে নিয়ে যাওয়া। যে অনুষ্ঠানের পর ছাত্রকে বিদ্যা শিক্ষার জন্য গুরুর নিকট নিয়ে যাওয়া হত তার নাম ছিল উপনয়ন। উপনয়ন শব্দের সহজ অর্থ যজ্ঞােপবীত বা পৈতা ধারণ।

৯। সমাবর্তন : প্রাচীনকালে পাঠ শেষে গুরুগৃহ থেকে নিজগৃহে ফিরে আসার সময় যে অনুষ্ঠান হতাে তার নাম ছিল সমাবর্তন। এই অনুষ্ঠানে গুরু শিষ্যকে অনেক মূল্যবান উপদেশ দিতেন।

১০। বিবাহ : যৌবনে দেব, পিতৃপূজা ও হােম প্রভৃতির মাধ্যমে মন্ত্রোচারণপূর্বক বর ও বধূর মিলনস্বরূপ সংস্কারকে বলা হয় বিবাহ।

এই দশটি শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠানের নাম দশকর্ম। বিবাহ খুব বড় উৎসব। এ আমরা সকলেই বুঝি। গর্ভাধান এখন আর অনুষ্ঠিত হয় না। পুংসবন গর্ভের তৃতীয় মাসে গর্ভশশাধনের জন্য করা হত। এখন পুংসবনও লােপ পেয়ে যাচ্ছে। জাতকর্ম সন্তান জন্ম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনুষ্ঠিত হত। এখন ষষ্ঠী পূজা প্রভৃতি কিছু কিছু অনুষ্ঠান করা হয়। নামকরন ও অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠিত হয়। চূড়াকরন ও উপনয়ন এ দুটো সংস্কার বর্তমানে ব্রাহ্মণ ছেলেদের জন্য অনুষ্ঠিত হয়। পূর্বে বিভিন্ন সময়ে সংস্কার দুটো অনুষ্ঠিত হত। এখন একদিনেই চূড়াকরন ও উপনয়ন অনুষ্ঠিত হয়। চূড়াকরনের প্রথমে কান ফোঁড়াননা পরে অন্যান্য অনুষ্ঠান হত। উপনয়নে পৈতা দেয়া হয়। গুরুগৃহে পাঠ শেষ করে গৃহে ফিরে আসার নাম সমাবর্তন।


0 0 votes
Article Rating
guest
57 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments