স্বদেশ সংস্কৃতি ও পরিবেশ

বাংলা মাস ও ইংরেজি মাস অনুসারে বাংলাদেশের আবহাওয়া বা কাল :

ইংরেজি মাসবাংলা মাসকাল বা আবহাওয়া
এপ্রিল-জুনবৈশাখ-জ্যৈষ্টগ্রীষ্মকাল
জুন-আগস্টআষাঢ়-শ্রাবণবর্ষাকাল
আগস্ট-অক্টোবরভাদ্র-আশ্বিনশরৎকাল
অক্টোবর-ডিসেম্বরকার্তিক-অগ্রহায়ণহেমন্তকাল
ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারিপৌষ-মাঘশীতকাল
ফেব্রুয়ারি-এপ্রিলফাল্গুন-চৈত্রবসন্তকাল

গ্রীষ্মকাল : বাংলা বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ বা ইংরেজি এপ্রিল-জুন এই দুই মাস মিলে গ্রীষ্মকাল। অগ্নি মশাল হাতে নিয়ে মাঠ-ঘাট পােড়াতে পােড়াতে গ্রীষ্মকালের আগমন ঘটে। তখন আকাশ-বাতাস ধুলোবালিতে ধূসরিত হয়ে উঠে। খাল-বিল ও নদী-নালা শুকিয়ে যায়। অসহ্য গরমের ফলে সমস্ত প্রাণিকুল একটু শীতল পানি ও ছায়ার জন্য কাতর হয়ে পরে। এরই মধ্যে কখনাে হঠাৎ শুরু হয় কালবৈশেখীর দুরন্ত তাণ্ডব। তবে হ্যা, গ্রীষ্ম শুধু পােড়ায় না, অকৃপণ হাতে আমাদের দান করে আম, জাম, জামরুল, লিচু, তরমুজ ও নারকেলের মতাে অমৃত ফল।

বর্ষাকাল : বাংলা আষাঢ়-শ্রাবণ বা ইংরেজি এপ্রিল-জুন এই দুই মাস মিলে আগমণ হয় বর্ষাকালের। তখন মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জনে প্রকৃতি থেমে থেমে শিউরে উঠে। তুমুল বৃষ্টির ফলে মাঠ-ঘাট পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। প্রকৃতিতে দেখা দেয় মনােরম সজীব। জনজীবনে ফিরে আসে প্রশান্তির ছায়া। গাছে গাছে ফোটে কদম, কেয়া, জুই। বর্ষায় পাওয়া যায় আনারস, পেয়ারা প্রভৃতি ফল। 

শরৎকাল : বাংলা ভাদ্র-আশ্বিন বা ইংরেজি আগস্ট-অক্টোবর দুই মাস শরৎকাল। এসময় সাদা মেঘ নীল আকাশে তুলাের মতাে করে ভেসে বেড়ায়। নদীর তীরে থাকে সাদা কাশফুলের সমারোহ। বিকেল বেলা আকাশে উড়ে চলে সাদা বকের সারি। সবুজ ঢেউয়ের দোলায় দুলে ওঠে ধানের খেত। রাতের আকাশে জ্বলজ্বল করে অজস্র তারার মেলা। শরৎকালের এই অপরূপ এই সৌন্দর্যের জন্যই শরৎকে বলা হয় ঋতুর রানী।

হেমন্তকাল : প্রতি ঘরে ঘরে নবান্নের আনন্দ নিয়ে আগমন হয় হেমন্তকালের। বাংলা কার্তিক-অগ্রহায়ণ বা ইংরেজি অক্টোবর-ডিসেম্বর দুই মাস নিয়ে হেমন্তকাল। তখন প্রকৃতি বরণ করে হেমন্তের হলুদ রূপ। শর্ষে ফুলে ভরে যায় মাঠের বুক। মাঠে মাঠে তখন দেখা মিলে পাকা ধান। কৃষক ব্যস্ত হয়ে পড়ে ফসল কাটার কাজে। তখন সােনালী ধানে ভরে ওঠে কৃষকের গােলা, তাদের মুখে ফোটে আনন্দের হাসি।

শীতকাল : বাংলা পৌষ-মাঘ দুই মাস শীতকাল। কুয়াশার চাদর গায়ে মোড়ে উত্তরের হাওয়ার সাথে আসে শীত। তীব্র শীতের দাপটে মানুষ ও প্রকৃতি তখন অসহায় হয়ে পড়ে। তবে বিভিন্ন রকমের শাক-সবজি ও ফল-ফুলের সমারােহে বিষন্ন প্রকৃতি ভরে ওঠে। আবার তখন বাতাসে ভাসে টাটকা খেজুর রসের ঘ্রাণ। তখন গ্রামবাংলার মানুষ ক্ষীর, পায়েস আর পিঠাপুলির উৎসবে মাতােয়ারা হয়ে থাকে।

বসন্তকাল : সব ঋতু শেষে বসন্ত আসে রাজবেশে। ফাল্গুন-চৈত্র দুই মাস বসন্তকাল। বসন্ত নিয়ে আসে সবুজের সমারােহ। গাছে গাছে তখন দেখা মেলে নতুন পাতার আর কোকিল-পাপিয়ার সুমধুর গান। দখিনা বাতাস বুলিয়ে দেয় শীতল সুমধুর পরশ। মানুষের প্রাণে বেজে ওঠে তখন মিলনের সুর।


0 0 votes
Article Rating
guest
66 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments