বৌদ্ধ ধর্ম

বন্দনা ও প্রার্থনা : বুদ্ধ শব্দের অর্থ জ্ঞানী, তাই বলে জ্ঞানী | মাত্রই বুদ্ধ নন, কেবল তাকেই বুদ্ধ নামে অভিহিত করা হয় যিনি | অনিত্য, দুঃখ, অনাত্মা-ত্রিলক্ষনযুক্ত জগতের প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে পেরেছেন, যিনি দুঃখ সমুদয়, দুঃখের নিরােধ এবং দুঃখ, দুঃখ নিরােধের উপায় স্বরূপ আর্য অষ্টঙ্গিক মার্গ সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে প্রবুদ্ধ হয়েছেন এবং যিনি কামাদি রিপুনিচয় বা অরিসমূহকে জয় করে আরিন্দম হয়েছেন।

বিশেষ অর্থে আমরা বুদ্ধ বলতে শাক্যরাজ শুদ্ধোদন পুত্র সিদ্ধার্থ গৌতমকেই বুঝি যিনি ৩৫ বছর বয়সে বুদ্ধ হলেন এবং পরবর্তী ৪৫ বছর ধরে বিস্তীর্ণ এলাকা, পথে জনপদে, গ্রামে গঞ্জে তার সাধনার ফল ধর্ম প্রচার করে ৮০ বছর বয়সে মল্লরাজ্যের অন্তর্গত কুশীনগরের যমক শালবৃক্ষের নিচে নির্বান লাভ করেন।

বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ ত্রিপিটক। এই ধর্মগ্রন্থ তিনভাগে বিভক্ত। যথা

  • বিনয় পিটক,
  • সুত্র পিটক,
  • অভিধম্ম পিকট।

যে কোন সমস্যার সমাধানে এই ধর্মীয় গ্রন্থের আশ্রয় নিতে হয় ।

ধর্মীয় উৎসব ও পার্বন : উপােসথ, বর্ষাবাস, প্রবারণা, কঠিন চীবর দান, প্রজ্যা ও শ্রমনের প্রবজ্যা, ভিক্ষু উপম্পদা। বৌদ্ধদের কাছে প্রত্যেক পুর্ণিমাই উৎসবের দিন, বিশেষত বৈশাখী পূর্ণিমা, আষাঢ়ী পূর্ণিমা, প্রবারণা পূর্ণিমা ও মাঘী পূর্ণিমা দিবসে বৌদ্ধ নরনারীগণ উৎসবের আনন্দে মেতে উঠে।

বৌদ্ধরা তিনটি নিয়ম মেনে চলে। তাহলে সকালে পুষ্পপূজা, দুপুরে আহার পূজা, বিকেলে প্রদীপ পূজা । প্রাত্যহিক নিয়মে বৌদ্ধরা খুব ভােরবেলা মুখ হাত ধুয়ে পুষ্পপূজা করে। তারপর দুপুর ১২টার মধ্যে নিজের আহার গ্রহণের আগে ভগবান। বুদ্ধের উদ্দেশ্যে আহার পূজা ও বিকেলে প্রদীপ পূজা করে থাকে। এই তিনটি পূজা দেওয়ার সময় সাধারণত : ত্রিরত্ন বন্দনা করে থাকে।

১. বুদ্ধ বন্দনা :

বুদ্ধ সুসুদ্ধো করুণা মহন্নবাে

যাে ন্ত সুমুদ্ধবর জ্ঞান লােচনাে,

লােকস পাপুপকিলােস সাতকো

বন্দামি বুদ্ধং অহমাদরেন তাং।

এর তাৎপর্য হলাে যিনি বুদ্ধ সুশুদ্ধ করুণা, মহার্ণব ও অত্যন্ত শুদ্ধবর জ্ঞানলােচন এবং যিনি লােকের পার ও উপক্লেশ মাতক, আমি সেই বুদ্ধকে সাদরে বন্দনা করছি।

২. ধর্ম বন্দনা :

ধম্মাে পদীপাে বিয় তস্স সুথুনাে

যােগ সগগপাকামত ভেদ ভিন্নকো,

লােকুওরা যােচ তদথ দীপননা।

বন্দামি ধম্মং আহমাদরেন তং।

অনুবাদ : সেই জগদ্গুরু ভগবান শাস্তা বুদ্ধের যেই ধর্ম প্রদীপবৎ মার্গ ফল, অমৃতভেদ নির্দেশক, যে ধর্ম পরমার্থ সত্য প্রকাশক, ও ত্রিলোেকশ্রেষ্ঠ আমি সেই ধর্মকে সাদরে বন্দনা করছি।

কঠিন চীবর দান : প্রতিবছর সমস্ত থেরবাদী দেশ সমূহে এ উৎসবটি সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়। আশ্বিনী পূর্ণিমার পর দিন থেকে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত একমাস দানক্রিয়া উদ্যাপনের সময়। অন্যান্য দানের সাথে এর পার্থক্য এই যে, এ দানক্রিয়া একই বিহারে বছরে একবার মাত্র করা যায়। বছরের অন্যান্য সময় এটা করা যায় না। যে বিহারের কোন ভিক্ষু বর্ষাবাস করেননি সে বিহারে কঠিন চীবর দান উদযাপিত হতে পারে না।

যেদিন কঠিন চীবর দেয়া হবে সেদিন অরুণােদয় থেকে পর দিবসের অরুণােদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কাপড়বুনা, বস্ত্র কর্তন, সেলাই, রঙ করা প্রভৃতি সমস্ত প্রকার কার্য একই দিনে সম্পন্ন করতে হয় বলে একে কঠিন চীবর বলা হয়।

কথিত আছে একদা ষড়ভিজ্ঞালাভী পঞ্চশত অহৎ ভিক্ষু সঙ্গে করে ভগবান বুদ্ধ আকাশ মার্গে হিমালয়ের অনােবততপ্ত হ্রদে গিয়ে উপস্থিত হন। তিনি ঐ সরােবরে সহস্রদল বিশিষ্ট পদ্মোপরি স্থিত হয়ে নাগিত স্থবিরকে কঠিন চীবর দানের ফল বর্ণনা করার জন্য আদেশ করেন। নিম্নে কঠিন চীবর দানের ফলে জন্মজন্মান্তরে বহু সুখ উপভােগের বিবরণে নাগিত স্থবির বলেন –

১. আজ থেকে ত্রিশ কল্প পূর্বে গুণােত্তমক সংঘকে কঠিন চীবর দান করে এযাবৎ কোন নরক যন্ত্রণা ভােগ করিনি।

২. আমি আঠার কল্প দেবলােকে দিব্যসূখ উপভােগ করেছি। চৌত্রিশ বার দেব রাজা ইন্দ্র হয়ে দেবলােক শাসন করেছি।

৩. আমি মধ্যে মধ্যে রাজচক্রবর্তী সুখ লাভ করেছি। যেখানেই জন্মগ্রহণ করেছি সেখানেই সর্ব-সম্পদের অধিকারী হয়েছি। কোথাও আমার ভােগ সম্পদের অভাব হয়নি। কঠিন চীবর দানের এটাই ফল।

৪. আমি সহস্রবার ঐশ্বর্যশালী ব্ৰহ্ম হয়েছি, কোন সময় মনুষ্যকুলে জন্মগ্রহণ করলেও মহাপ্রভাবশালী ধনী গৃহে জন্মলাভ করেছি।


0 0 votes
Article Rating
guest
58 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments