ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :

ভাষা আন্দোলন : ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং উর্দুভাষী বুদ্ধিজীবীরা বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে দাবি ওঠে, বাংলাকেও অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলা ভাষার এ দাবিকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে। এতে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র-সমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৪৭ সালে ৬ই ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্রসভার আয়ােজন করে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন পরিচালনার জন্য একটি নতুন রাষ্ট্রভাষা পরিষদ গঠিত হয়, যার আহ্বায়ক ছিলেন জনাব শামসুল আলম।

১৯৪৮ সালে মােহাম্মাদ আলী জিন্নাহ পূর্ব পাকিস্তান সফরে এসে ঢাকায় দুটি সভায় বক্তৃতা দেন এবং একমাত্র উর্দুকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘােষণা দেন। ১৯৫০ সালের ১১ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়, এর আহ্বায়ক ছিলেন আবদুল মতিন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন একটি নতুন মাত্রা পায়। ১৯৫২ সালের ৩০শে জানুয়ারি রাজনৈতিক- সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধিদের এক সভায় “সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ” গঠিত হয়। যার আহ্বায়ক ছিলেন কাজী গােলাম মাহবুব। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২১শে ফেব্রুয়ারি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিল আয়ােজনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সময় সরকার ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে সমাবেশ- শােভাযাত্রা নিষিদ্ধ ঘােষনা করে। ২০শে ফেব্রুয়ারি সন্ধায় আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভা হয়। এবং ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার সংকল্পে অটুট থাকে । ঢাকায় ছাত্ররা পাঁচ -সাতজন করে ছােট ছােট দলে “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” শ্লোগান দিয়ে রাস্তার বেরিয়ে আসলে পুলিশ তাঁদের উপর লাঠিচার্জ করে, বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের সামলাতে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে রফিকউদ্দীন আহমদ, আবদুল জব্বার, আবুল বরকত শহীদ হয়। আহতদের মধ্যে পরে আবদুল সালাম শহীদ হন। পরদিন ২২শে ফেব্রুয়ারি জনতা নিহতদের গায়েবানা জানাজার নামাজ পড়ে ও শােকমিছিল বের করলে মিছিলের ওপর পুলিশ ও মিলিটারি পুনরায় লাঠি, গুলি ও বেয়ােনেট চালায়। এতে শফিউর রহমানসহ কয়েকজন শহীদ হন। ২৩শে ফেব্রুয়ারি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। গণপরিষদ বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিয়ে একটি বিল পাশ করে। ১৯৫২ সালের পর থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য বাঙালিদের সেই আত্মত্যাগকে স্মরণ করে দিনটি উদযাপন করা হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘােষণা করে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও প্রেক্ষাপট (১৯৪৭-১৯৭১) : মূলত ভাষা আন্দোলন থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ বপিত হয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাশকৃত ভারত স্বাধীনতা আইন ভারতবর্ষকে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি স্বাধীন দেশে বিভক্ত করে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে পূর্ব বাংলা নামক প্রদেশের জন্ম হয়। ১৯৫৫ সালে পূর্ব বাংলার নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান রাখা হয়। ১৯৫৪ সালের পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি লাভ করে। আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি এবং নেজামে ইসলাম ২১ দফার ভিত্তিতে ‘যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে যুক্তফ্রন্ট প্রাদেশিক সরকার গঠনের সুযােগ পায়। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী সাফল্য মুসলিম লীগ সরকার সুনজরে দেখেনি। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে পূর্ব বাংলার বিভিন্ন শিল্পকল- কারাখানায় বাঙালি-অবাঙালি শ্রমিকদের মধ্যে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়। এতে যুক্তফ্রন্ট সরকারকে দেশের আইন- শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় ব্যর্থ বলে দোষারােপ করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকার ২৯শে মে যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙ্গে দিয়ে পূর্ব বাংলায় গভর্নরের শাসনে জারি করে যা ১৯৫৫ সালের ২রা জুন পর্যন্ত বহাল থাকে। ১৯৫৪ সালের মার্চ থেকে ১৯৫৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের সাতটি মন্ত্রিসভা গঠিত হয় ও তিনবার গর্ভনরের শাসন চালু হয়। ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবর পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি করা হয়। ১৯৬২ সালের ১লা মার্চ সংবিধান ঘােষণা করা হয় এবং তা ৮ই জুন থেকে কার্যকর হয়। ১৯৬২ সালের ৩০শে জানুয়ারি সােহরাওয়ার্দীকে গ্রেফতার করা হলে প্রতিবাদে ছাত্ররা ১লা ফেব্রুয়ারি ছাত্র ধর্মঘট ডাকে ও রাস্তার বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

ধর্মঘট একনাগাড়ে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে। এভাবে আইয়ুব বিরােধী আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। ৮ জুন সামরিক আইন তুলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিবিদগণ দলীয় রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পান। ১৯৬৩ এর ডিসেম্বরে সােহরাওয়ার্দী ইন্তেকাল করার পরবর্তী মাসেই (২৫ জানুয়ারি ১৯৬৪) আওয়ামী লীগ আত্মপ্রকাশ করে। শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব-পাকিস্তানের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনােনীত হন। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরের পাক- ভারত যুদ্ধ হয়। পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহােরে অনুষ্ঠিত বিরােধী দল সমূহের নেতৃবৃন্দের এক কনভেনশনে ছয় দফা কর্মসূচি উপস্থাপন করলে উপস্থিত ৭৪০ জন সদস্যের মধ্যে ৭৩৫ জনই তাৎক্ষণিকভাবে তা নাকচ করে দেন। ১৩ মার্চ আওয়ামী লীগ ওয়াকিং কমিটির সভায় ছয় দফা কর্মসূচি অনুমােদন করা হয়। শেখ মুজিবসহ দলের অন্য নেতৃবৃন্দ সারাদেশ জুড়ে ছয় দফার প্রচার শুরু করেন। ছয় দফার পক্ষে অভাবনীয় জনমত সৃষ্টি হয় । ৮ মে শেখ মুজিব দেশরক্ষা আইনে গ্রেফতার হন। প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ৭ জুন গােটা প্রদেশে হরতাল পালন করে। ৭ জুন ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে ১০জন নিহত হয়। ১৯৬৭ সালের আগস্ট মাসে বেতার ও টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার বন্ধ করে দেয়। আগরতলা ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত থাকার অভিযােগ শেখ মুজিবুর রহমানসহ মােট ২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর প্রতিবাদে ২৯ জানুয়ারি সারা পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মঘট পালন করা হয়। শুরু হয় নতুন করে আইয়ুব বিরােধী আন্দোলন। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন যৌথভাবে ছাত্র সংগ্রাম কমিটি (Students Action Committee) গঠন করে এবং আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ১১ দফা দাবি ঘােষণা করে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এগার দফা দাবির মধ্যে আওয়ামী লীগের ছয় দফা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ১১ দফার আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করে। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ছাত্র নেতা মােঃ আসাদুজ্জামান পুলিশের গুলিতে শহীদ হলে আন্দোলন সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং তা গণআন্দোলনের রূপ নেয়। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং প্রক্টর ড. শামসুজ্জেহা প্রক্টরিয়াল দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় পাক সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হলে গণআন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নেয় এবং শেখ মুজিবুর বহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে রেসকোর্স ময়দানে প্রায় পাঁচ লক্ষ লােকের উপস্থিতিতে সংবর্ধনা দেওয়া হয় এবং “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করা হয়। “জয় বাংলা” শ্লোগানের উদ্ভবও ঘটে ঐ সভায় । ১০-১৩ মার্চ (১৯৬৯) রাওয়ালপিন্ডিতে বিরােধী নেতাদের বৈঠকে শেখ মুজিব ছয় দফা ও ১১ দফা দাবির পূর্ণ বাস্তবায়ন দাবি করেন। আইয়ুব খান ২৪ মার্চ (১৯৬৯) তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মােহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন এবং ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ দেশে সামরিক আইন জারি করেন। ক্ষমতা গ্রহণের ৮ মাস পর ২৮ নভেম্বর ১৯৬৯ ইয়াহিয়া খান ঘােষণা করেন যে ১৯৭০ সালের ৫ অক্টোবর দেশে জাতীয় পরিষদের এবং ২২ অক্টোবর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৭০ সালের ২৮ মার্চ “আইন কাঠামাে আদেশ” (Legal framework order) ঘােষণা করা হয়। আইন কাঠামাে আদেশে জাতীয় পরিষদের আসন সংখ্যা ৩১৩ (১৩টি মহিলা আসনসহ) এবং তন্মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ৭টি মহিলা আসনসহ ১৬৯টি আসন নির্ধারণ করা হয়। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদের এবং ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের তারিখ নির্দিষ্ট হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পি.পি.পি) পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত ১৪৪টির মধ্যে ৮৮টি আসন লাভ করে। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০ টির মধ্যে ২৮৮টি আসন লাভ করে। ইয়াহিয়া খান ১৪ ফেব্রুয়ারি ঘােষণা করেন। যে, জাতীয় সংসদের অধিবেশন ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ঢাকায় বসবে । কিন্ত ভুট্টো তাঁর মতামত গ্রহণের পূর্ণ অঙ্গীকার না দিলে উক্ত অধিবেশনে যােগ দিতে অস্বীকার করেন। ফলে ইয়াহিয়া খান ১ মার্চ ১৯৭১ এক ঘােষণা জারির মাধ্যমে ৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত ঘােষণা করেন। ইয়াহিয়া খানের এ ঘােষণায় পূর্ব পাকিস্তানবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ২ মার্চ ঢাকায় এবং তার পরদিন সারা দেশে হরতাল পালিত হয়। ৩ মার্চ (১৯৭১) পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ ঢাকায় পল্টন ময়দানের জনসভায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ঘােষণা ও কর্মসূচি’ শীর্ষক একটি ইশতেহার প্রচার করে। ৬ মার্চ ইয়াহিয়া খান এক ঘােষণায় ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত ভাষণের মাধ্যমে তিনি ইয়াহিয়া খান কর্তৃক ঘােষিত ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যােগ দেয়ার প্রশ্নে চারটি পূর্ব শর্ত আরােপ করেন-

(ক) অবিলম্বে সামরিক শাসন প্রত্যাহার করতে হবে,

(খ) অবিলম্বে সৈন্য বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে,

(গ) প্রাণহানি সম্পর্কে তদন্ত করতে হবে এবং

(ঘ) জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের পূর্বেই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দলের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

১৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান ঢাকা আসেন এবং ২৪ মার্চ পর্যন্ত শেখ মুজিবের সংগে বৈঠক করেন। ২১ মার্চ ভুট্টো ঢাকায় এসে আলােচনায় যােগ দেন। ইয়াহিয়া খান আলােচনার নামে কালক্ষেপণ এবং পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব-পাকিস্তানে সেনাসদস্য ও সামরিক সনঞ্জামাদি আনয়ন করছিলেন। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকায় আকস্মিকভাবে গণহত্যা শুরু করে ।

স্বাধীন বাংলাদেশ : পাকবাহিনীর এ নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। যা নয় মাস ধরে চলে। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে স্বাধীন বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথ তলায় অস্থায়ী সরকার (মুজিবনগর সরকার নামেও পরিচিত) শপথ গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সমাপ্ত হয় মুক্তিযুদ্ধ।

মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত তাৎপর্য পরিসংখ্যান :

মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন এম. এ. জি ওসমানী। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় মােট ১১টি সেক্টরে বিভক্ত ছিল। অস্থায়ী সরকার গঠিত হয় – ১০ এপ্রিল ১৯৭১ এবং অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে – ১৭ এপ্রিল ১৯৭১।

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য খেতাবপ্রাপ্ত মােট মুক্তিযােদ্ধা- ৬৭৬ জন (বীরশেষ্ঠ- ৭ জন, বীর উত্তম- ৬৮ জন, বীর বিক্রম-১৭৫ জন, বীরপ্রতীক- ৪২৬ জন)। যার মধ্যে একমাত্র বিদেশী বীরপ্রতীক হলেন- ডব্লিউ এস ওভারল্যান্ড। মহিলা বীর প্রতীক ২ জন হলেন- তারামন বিবি ও ডা. সেতারা বেগম।

৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।

যৌথ বাহিনীর সেনাধ্যক্ষ ছিলেন- জেনারেল জগজিৎ সিং আবােরা।

তকালিন পাকিস্তানের সেনাপতি ছিলেন- জেনারেল এ কে খান নিয়াজী।

পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন – এয়ার কমান্ডার এ কে খন্দকার।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস বা জাতীয় দিবস ২৬ মার্চ এবং বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর।


0 0 votes
Article Rating
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments