স্কাউট আন্দোলনের ইতিহাস

বিশ্বব্যাপী স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট স্টিফেনশন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল (Robert Stephenson Smyth Lord Baden Powell of Gilwell) যাকে সারা দুনিয়ার স্কাউটরা সংক্ষেপে বি. পি. বলে জানে। তাঁর জন্ম হয় ১৮৫৭ সালের ২২শে ফ্রেরুয়ারি লন্ডনের হাইড পার্কে। তিনি কর্মজীবনে সেনাবাহিনীতে যােগ দেন। বি.পি. ১৮৯৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষুদ্র সীমান্ত শহর ম্যাফেকিং-এ যখন ২১৭ দিন বুয়রদের দ্বারা অবরুদ্ধ ছিলেন, তখন তাঁর নিজ সেনাদলের পাশাপাশি স্থানীয় বালকদের ব্যবহার করে যে সফলতা লাভ করেছিলেন, পরবর্তীতে সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্কাউটিং বালকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার পদক্ষেপ নেন এবং কালক্রমে তা মহান আন্দোলনে রূপ নেয়।

ম্যাফেকিং জয়ের পর দেশে ফিরে ২০ জন বালক নিয়ে ২৯শে আগস্ট থেকে ০৮ই সেপ্টেম্বর ১৯০৭ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের ব্রাউন-সী দ্বীপে ব্যাডেন পাওয়েল যে পরীক্ষামূলক ক্যাম্প আয়ােজন করেছিলেন; তারই ফলশ্রুতিতে সারা ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় এবং পর্যায়ক্রমে সারা বিশ্বে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ১৯০৮ সালে স্কাউটদের জন্য সবচেয়ে ব্যবহার উপযােগী বি.পি.-র লেখা “স্কাউটিং ফর বয়েজ” বইটি প্রকাশিত হয়। ১৯০৯ সালের মধ্যে চিলি, জার্মান, সুইডেন, ফ্রান্স, নরওয়ে, হাংগেরি, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, সিংগাপুর প্রভৃতি দেশে স্কাউট আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাপক জনপ্রিয় এই বইটি ছিল স্কাউটদের জন্য দিক-নির্দেশনা যা এ আন্দোলনকে আরও বেগবান করে। ১৯১৪ সালে কাব স্কাউটিং এবং ১৯১৮ সালে স্কাউটের বয়ােজ্যেষ্ঠ শাখা রােভারিং শুরু হয়। ১৯২০ সালে ইংল্যান্ডের অলিম্পিয়াতে বিশ্বের প্রথম জাম্বুরি অনুষ্ঠিত হয়।

ভারতবর্ষে ১৯১০ সালে স্কাউটিং শুরু হলেও তখন শুধু ইংরেজ ছেলেদের জন্য স্কাউটিং সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে বৃটিশ সরকার ১৯১৯ সালে ভারতবাসীদের স্কাউটিং করার সুযােগ করে দেয়। ভারতীয়দের নিয়ে বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন সময়ে আলাদা আলাদা দল গঠিত হতে থাকে। ১৯৩৮ সালে ভারত বয় স্কাউট সমিতি বিশ্ব স্কাউট সংস্থার স্বীকৃতি পায়।

পাকিস্তান সৃষ্টির পরে ১৯৪৭ সালের ১লা ডিসেম্বর করাচিতে পাকিস্তান বয় স্কাউট এসােসিয়েশন গঠিত হয়। সে সময়ে বর্তমান বাংলাদেশ পাকিস্তানের একটি প্রদেশ ছিল। নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। তখন এখানে গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান বয় স্কাউট সমিতি।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭২ সালের ৯ই এপ্রিল গঠিত হয় বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি। প্রথম জাতীয় কমিশনার নির্বাচিত হন পিয়ার আলী নাজির। ঐ বছরেই সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রপতির আদেশ বলে বাংলাদেশ স্কাউটসকে সরকারী স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

১৯৭৪ সালের ১লা জুন বিশ্ব স্কাউট সংস্থা বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতিকে বিশ্ব স্কাউট কনফারেন্সের ১০৫ নম্বর সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

১৯৭৪ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ই মার্চ পর্যন্ত যশােরের পুলেরহাটে, ১৯৭৭ সালের ২ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রংপুরে এবং ঐ বছর এপ্রিল মাসের ২ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত ঢাকার শেরে বাংলা নগরে অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় জাতীয় স্কাউট র্যালী। ১৯৭৭ সালের ২৬ থেকে ২৯শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকার খিলগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হয় কাব স্কাউটদের প্রথম বাংলাদেশ কাব ক্যাম্পুরি।

১৯৭৮ সালের ১৪ থেকে ১৮ই জানুয়ারি এবং ২১ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মৌচাকে যথাক্রমে রােভার স্কাউটদের প্রথম বাংলাদেশ রােভার মুট এবং বয় স্কাউটদের প্রথম জামুরি অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৭৮ সালের ১৮ই জুন পঞ্চম কাউন্সিল সভায় বাংলাদেশ স্কাউট সমিতির নাম দেওয়া হয় “বাংলাদেশ স্কাউটস”। বর্তমানে বাংলাদেশ স্কাউটস ১২টি অঞ্চলে বিভক্ত। সেগুলাে হল :

  • ঢাকা,
  • চট্টগ্রাম,
  • খুলনা,
  • রাজশাহী,
  • সিলেট,
  • বরিশাল,
  • কুমিল্লা,
  • দিনাজপুর,
  • রােভার,
  • রেলওয়ে,
  • নৌ ও
  • এয়ার অঞ্চল।

২০০৭ সালে বিশ্বব্যাপী স্কাউট আন্দোলনের শতবর্ষ উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশ স্কাউটস এর আয়ােজনে ২৮শে জুলাই থেকে ০২রা আগস্ট ২০০৭খ্রিঃ পর্যন্ত জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মৌচাকে স্কাউট ও রােভার স্কাউটদের নিয়ে শতবর্ষ সৃজনী ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়।


স্কাউট আন্দোলনের ইতিহাস – সমাপ্ত