বাংলাদেশ স্কাউটস এর ইতিহাস :
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাজ অর্জন করতে গিয়ে ইতােপূর্বে তােমরা স্কাউট আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে জেনেছ; এই বইয়ে বাংলাদেশ স্কাউটস এর ইতিহাস সম্পর্কে জানবে । ১৯১০ সালে পাক-ভারত উপমহাদেশে স্কাউট আন্দোলন শুরু হয় । কিন্তু এই উপমহাদেশের ছেলেরা তখন এই আন্দোলনে অংশ নিতে পারেনি । শুধু ইংরেজ ছেলেরা এতে অংশ নেয়। ব্রিটিশ সরকার আইন প্রণয়ন করে এই উপমহাদেশের ছেলেদের জন্য স্কাউটিং নিষিদ্ধ ঘােষণা করেছিল।
কিন্তু একটি কালজয়ী মহৎ উদ্দেশ্য শুধু ব্যক্তি বিশেষের জন্য হতে পারে না অথবা একে বাধ্যবাধকতায় সীমাবদ্ধ করাও সম্ভব নয়। উপমহাদেশের জ্ঞানী ব্যক্তিগণ এই দেশের ছেলেদের মহৎ আন্দোলন থেকে বঞ্চিত না করে সরকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্কাউট আন্দোলনের বীজ বপন করেন। ১৯১৩ সালে ডাঃ তারাপুরওয়ালার নেতৃত্বে বেনারসে, পন্ডিত শ্রীরাম বাজেপয়ীর নেতৃত্বে উত্তর প্রদেশের শাহজাহানপুরে, ১৯১৪ সালে মিসেস এ্যানি বেসাস্তে-র পৃষ্ঠপােষকতায় কানপুরে ও শ্রীলংকায়, ১৯১৫ সালে এ, এস স্যালজলীমুনের নেতৃত্বে সিন্ধুতে, ১৯১৬ সালে ডাঃ এস এ মল্লিকের নেতৃত্বে বাংলায় এবং ঐ একই বছর এন মহাজন-এর নেতৃত্বে মুম্বাইয়ে স্কাউটিংয়ের মশাল প্রজ্জ্বলিত হয়। উল্লেখ্য, তখনও এদেশের ছেলেরা স্কাউটিং করবে ব্রিটিশ সরকার তা মেনে নেয়নি এবং ব্রিটিশ স্কাউট এসােসিয়েশনও কোন স্বীকৃতি এদেশের স্কাউটিং আন্দোলনকে দেয়নি। ১৯১৭ সালে যখন এই উপমহাদেশের প্রায় প্রতিটি প্রদেশে স্কাউটিং ছড়িয়ে পড়েছে তখন সরকারের কাছে আবেদন করা হয় এই আন্দোলনকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার আবেদন অগ্রাহ্য করে।
১৯১৮ সালে এ্যানি বেসান্তের নেতৃত্বে ভারত স্কাউট এসােসিয়েশন উপমহাদেশে স্কাউটিং কার্যক্রম শুরু করে। এই এসােসিয়েশনের কার্যাবলি কিশাের যুবক তথা মানুষকে স্কাউটিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট করে। স্কাউটিংয়ের মহৎ উদ্দেশ্য জনসাধারণকে প্রভাবিত করে। ব্যাপক জনসমর্থন দেখে ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ সালে এদেশের ছেলেদের জন্য স্কাউটিংয়ের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
এরপর ১৯২০ সালে বেঙ্গল বয় স্কাউট এসােসিয়েশন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রাদেশিক স্কাউট সংগঠন হিসেবে গঠিত হয়। এর সদর দপ্তর স্থাপন করা হয় কলকাতায়। এভাবেই স্কাউট আন্দোলনের শুভযাত্রা উপমাহাদেশে সূচিত হয়।
ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে ১৯২০ সালে উপমহাদেশের ছেলেরা স্কাউটিং করার অধিকার পায়। সরকারী স্বীকৃতি পাওয়ার পর কলকাতায় দফতর স্থাপন করে গঠিত হয় “বেঙ্গল বয় স্কাউট এসােসিয়েশন”। এই এসােসিয়েশনের তালিকভুক্ত জেলা স্কাউট হিসেবে ১৯২০ সাল থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত তৰ্কালীন পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশে) স্কাউটিং চালু ছিল।
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ পাকিস্তান ও ভারত এই দুই নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়। ভারত বিভক্তির পর পাকিস্তান আবার পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুইভাগে অভিহিত হয়। সেই পূর্ব পাকিস্তানই বর্তমানে বাংলাদেশ। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানে ১লা ডিসেম্বর জালাল উদ্দিন সুজার প্রচেষ্টায় করাচিতে পাকিস্তান বয় স্কাউট এসােসিয়েশন গঠিত হয়। স্কাউটার এ এম সলিমুল্লাহ ফাহমীর নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের ২২শে মে ইস্ট বেঙ্গল স্কাউট এসােেিসয়শন গঠিত হয়। এই সমিতির কার্যালয় স্থাপিত হয় ঢাকায়। এর আগে কলকাতায় বেঙ্গল স্কাউট এসােসিয়েশন কার্যালয় থাকায় দেশ ভাগের পর প্রায় শূন্য হাতে কোন রেকর্ডপত্র ছাড়াই স্কাউটারদের প্রচেষ্টায় এবং প্রাদেশিক গভর্নরের তহবিল থেকে দেওয়া বছরে মাত্র এক হাজার টাকা পুঁজি সম্বল করে ইস্ট বেঙ্গল স্কাউট এসােসিয়েশন কাজ শুরু করে।
প্রাক্তন প্রাদেশিক কমিশনার সলিমুল্লাহ ফাহমী, প্রাদেশিক সাংগঠনিক কমিশনার এইচ জি এস. বিভার, প্রাদেশিক সম্পাদক এ এফ এম আবদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াকিল আহম্মদ আব্বাসী এবং আরও কয়েকজন স্কাউটিং নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিবর্গের সম্মিলিত ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় তদানীন্তন ইস্ট বেঙ্গল বয় স্কাউট এসােসিয়েশন একটি শক্তিশালী প্রাদেশিক সংগঠন হিসেবে গড়ে ওঠে।
পরবর্তীতে ইস্ট বেঙ্গল বয় স্কাউট এসােসিয়েশন নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান বয় স্কাউট এসােসিয়েশন নামকরণ করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ স্কাউটস, পাকিস্তান বয় স্কাউট এসােসিয়েশনের প্রাদেশিক শাখা হিসাবে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। সম্পৃক্ত ছিল
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের ৮ই ও ৯ই এপ্রিল অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রথম জাতীয় কাউন্সিল সভায় ৯ই এপ্রিল বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি গঠিত হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতির ১১ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭২ সালের এক অধ্যাদেশে বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি সরকারী স্বীকৃতি লাভ করে। প্রথম জাতীয় কমিশনার নির্বাচিত হন জনাব পিয়ার আলী নাজির। এই পদটি ১৯৭৮ সালে “প্রধান জাতীয় কমিশনার” নামে পরিবর্তিত হয়।
১৯৭৪ সালের পহেলা জুন বিশ্ব স্কাউট সংস্থা বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতিকে বিশ্ব স্কাউট কনফারেন্সের ১০৫তম সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৮ সালের ১৮ই জুন পঞ্চম কাউন্সিল সভায় বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতির নাম পরিবর্তন করে “বাংলাদেশ স্কাউটস” করা হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতির ২৪শে ডিসেম্বর ১৯৭৮ সালের অধ্যাদেশে সমিতি শব্দের পরিবর্তে “বাংলাদেশ স্কাউটস” নাম স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
স্কাউট আদর্শ – সমাপ্ত
Leave a Reply