স্কাউট আদর্শ

স্কাউটিং কি ও কেন?
স্কাউট আন্দোলনের উদ্দেশ্য হলো ছেলে-মেয়েদের শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক ও মানসিক দিকসমূহের পরিপূর্ণ বিকাশ করা। যাতে তারা ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তি, দায়িত্বশীল নাগরিক এবং স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে জীবনযাপন করতে পারে। স্কাউটিংয়ের জনক রবার্ট স্টিফেনশন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল সংক্ষেপে বি.পি ১৯০৭ সালে ব্রাউন্সী দ্বীপে ২০ জন বালক নিয়ে পরীক্ষামূলক ক্যাম্পিং-এর মাধ্যমে ১১ থেকে ১৬+ বছর বয়সী বালকদের নিয়ে স্কাউটিং শুরু করেন এবং তিনি এ পরীক্ষামূলক ক্যাম্পিং করে নিশ্চিত হন যে, মুক্তাঙ্গনে বৈচিত্র্যপূর্ণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে খুব সহজে বালকদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধন করা যায়, যা তাদের দৈহিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক, সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন ঘটিয়ে চরিত্রবান, দক্ষ ও আত্মত্মনির্ভরশীল আদর্শ নাগরিকরূপে গড়ে তোলে।

A photo of baden powell (স্কাউট আদর্শ)
ছবিতে: স্কাউটিংয়ের জনক রবার্ট স্টিফেনশন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল


বি.পি তার লেখা “Scouting For Boys” বইয়েতে বলেছেন –

❝ By term Scouting is meant the work and attributes of backwoosmen, explorers and frontiermen.❞

অর্থাৎ

স্কাউটিং বলতে আদি বনবাসী মানুষ, অশ্বেষণকারী ও সীমান্তবাসীদের কাজ এবং গুণাবলীকে বুঝায়।

স্কাউট আন্দোলনের মৌলিক বিষয়সমূহ হলো-

  1. স্কাউটিং-এর সংজ্ঞা বা Defination,
  2. স্কাউটিং-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বা Purpose,
  3. স্কাউটিং-এর নীতিমালা বা Principles এবং
  4. স্কাউট পদ্ধতি বা Method.

বয়সের ভিত্তিতে স্কাউট-এর স্তর বিন্যাস:

স্কাউট আন্দোলন সকল ধরণের ছেলে-মেয়েদের জন্য উন্মুক্ত। সুষ্ঠু পরিচালনার সুবিধার্থে বাংলাদেশে স্কাউটিং ৩ টি শাখা বা স্তরে বিভক্ত:

  • কাব স্কাউট: যে সকল কিশোর-কিশোরীর বয়স ৬ বছরের বেশি কিন্তু ১১ বছরের কম। তাদের কাব স্কাউট বলা হয়ে থাকে।
  • স্কাউট: যে সকল বালক-বালিকার বয়স ১১ বছর বা তার চেয়ে বেশি কিন্তু ১৭ বছরের কম। তাদের স্কাউট বলা হয়ে থাকে।
  • রোভার স্কাউট: যে সকল তরুণ-তরুণী কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে অথবা যাদের বয়স ১৭ বা তার চেয়ে বেশি কিন্তু ২৫ বছরের কম। তাদেরকে রোভার স্কাউট বলা হয়ে থাকে। রেলওয়ে, বিমানসহ ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে চাকুরীজীবীদের জন্য বয়স ৩০ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য।

স্কাউটিংয়ের মূলনীতি:

স্কাউট আন্দোলন নিম্নে বর্ণিত ৩টি মূল নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত:

  1. স্রষ্টার প্রতি কর্তব্য পালন (আধ্যাত্মিক দিক),
  2. অপরের প্রতি কর্তব্য পালন (সামাজিক দিক),
  3. নিজের প্রতি কর্তব্য পালন (ব্যক্তিগত দিক) ।

স্কাউট পদ্ধতি:

স্কাউট পদ্ধতি একটি ধারাবাহিক স্ব-শিক্ষামূলক প্রক্রিয়া, যার উপাদানগুলো হচ্ছে:

  1. প্রতিজ্ঞা ও আইনের চর্চা এবং তার প্রতিফলন।
  2. হাতে কলমে শিক্ষা।
  3. ছোট ছোট দলের সদস্য হিসেবে কাজ করা (যেমনঃ ষষ্ঠক/উপদল পদ্ধতি)।
  4. ক্রমোন্নতিশীল ও উদ্দীপনামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম (ব্যাজ পদ্ধতি)।
  5. বয়স্ক নেতার সহায়তা।
  6. প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ও
  7. প্রতিকী কাঠামো।

স্কাউটদের বৈশিষ্ট্য :

স্কাউটিং-এর বৈশিষ্টের কারণে পুরো বিশ্বে আজও সমাদৃত। স্কাউটিং-এর বৈশিষ্ট্যের কতকগুলো দিক হচ্ছে:

  • একজন স্কাউট প্রতিজ্ঞা নিয়ে আন্দোলনে যোগ দেয় এবং তার পুরো জীবনে প্রতিজ্ঞা মেনে চলার চেষ্টা করে।
  • স্কাউটরা সাফল্য বা বিফলতার কথা না ভেবে তার যথাসাধ্য চেষ্টা করে।
  • স্কাউটরা সকল কাজ হাতে কলমে করার মাধ্যমে শেখে ও তা উপযুক্ত জায়গায় প্রয়োগ করে।
  • স্কাউটরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে কাজ করে ও শেখে যাকে উপদল পদ্ধতি বলা হয়।
  • স্কাউটদের কাজের স্বীকৃতি ব্যাজের মাধ্যমে দেয়া হয়। একে ব্যাজ পদ্ধতি বলা হয়। নিজের সামর্থ্য অনুসারে বিষয় নির্বাচন করে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা অর্জনে সফল হলে ব্যাজ প্রদান করা হয়।
  • স্কাউটরা নির্ধারিত পোষাক, স্কাউট ব্যাজ ও স্কার্ফ পরিধান করে ।
  • স্কাউটরা নির্ধারিত তিন আঙুলে বিশেষ কায়দায় সালাম দেয় ও গ্রহণ করে থাকে।
  • স্কাউটরা ডান হাতে পরস্পরের সাথে করমর্দন করে। যদিও পূর্বে আমাদের দেশে বাম হাতে করমর্দন করার প্রচলন ছিল। তাছাড়া এখনো কিছু কিছু দেশে স্কাউটরা বাম হাতে করমর্দন করে থাকে।
  • স্কাউটরা নিজস্ব কায়দায় তাদের অনুষ্ঠান পরিচালনা করে থাকে যেমন ক্যাম্পুরী, জাম্বুরী, মুট, ক্যাম্পফায়ার, স্কাউটস ওন, ক্রু মিটিং, প্যাক মিটিং ইত্যাদি।

স্কাউট আদর্শ – সমাপ্ত