ধর্মপালন – খ্রিষ্ট ধর্ম

খ্রিষ্ট ধর্ম

ইতােপূর্বে সদস্য ব্যাজ স্তরে তােমরা খ্রিষ্ট ধর্ম, খ্রিষ্টের অনুসারী হওয়ার গুনাবলী, প্রার্থনা ও উপবাসের প্রয়ােজনীয়তা, মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য, ঈশ্বরের ভালবাসার উপলব্ধি, জীবন সাক্ষ্য, ষ্ট্যান্ডার্ড ব্যাজ বইয়ে বাইবেলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, পবিত্র বাইবেল পাঠের উদ্দেশ্য, মন্ডলীর শিক্ষা, প্রােগ্রেস ব্যাজ স্তরে মুক্তির ইতিহাস, ঈশ্বরের অভিপ্রায় ও পরিকল্পনা, ঈশ্বরের আজ্ঞাসমূহ পবিত্র আত্মার উপস্থিতি, মন্ডলীর পার্বনসমূহ সম্পর্কে শিখেছ। এই স্তরে নিমের বিষয়গুলি সম্পর্কে জানবে ও অনুশীলন করবে।

খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের করনীয়:

  • নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।
  • প্রকৃত সেবক (মার্ক ৯ঃ৩৩-৩৭)।
  • ভালবাসা (মার্ক ১২ঃ২৮-৩৩/১ করিঃ ১৩ঃ১-১৩)

নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য: জন্মসূত্রে প্রতিটি মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে, পরিবারে ও জাতীয় জীবনে নিরাপত্তা ও অধিকার ভােগের দাবীদার। পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সুযােগ-সুবিধা আদায়ের জন্য তাকেও রাষ্ট্রের ও জাতির প্রতি আনুগত্য স্বীকারসহ যথাযথ শ্রদ্ধাবােধ পােষন করা তার নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। পবিত্র বাইবেলে এ সম্বন্ধে অনেক ঘটনার বর্ণনা দেওয়া আছে।

প্রকৃত সেবক: এবার তাঁরা কাফার্নাউমে এসে পৌছালেন। বাড়ীতে আসার পর যিশু শিষ্যদের এই প্রশ্ন করলেনঃ “পথে কী নিয়ে তােমাদের মধ্যে এত তর্ক হচ্ছিল?” তারা চুপ করে রইলেন, কারণ পথে তারা নিজেদের মধ্যে এই নিয়েই তর্ক করছিলেন যে, তাদের মধ্যে কে সবচেয়ে বড়। যিশু তখন সেখানে বসে বারােজনকে কাছে ডেকে বললেনঃ “কেউ যদি প্রথম হতে চায়, তাহলে সে যেন সকলের শেষেই থাকে, সে যেন সকলেরই সেবক হয়!” তারপর তিনি একটি শিশুকে নিয়ে তাদের সামনে দাঁড় করালেন; আর দুইহাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বললেনঃ “যে-কেউ আমারই জন্যে এর মতাে কোন শিশুকে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে, আর আমাকে যে গ্রহণ করে, সে আমাকে নয়, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁকেই গ্রহণ করে (মার্ক ৯ঃ৩৩-৩৭)।

ভালবাসা: “শাস্ত্রীদের একজন তখন এগিয়ে এলেন। তিনি তাঁদের ওই আলােচনা শুনেছিলেন আর লক্ষ্যও করছিলেন, কেমন সুন্দর ভাবে যীশু উত্তর দিয়েছেন। তিনি তখন যীশুকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “আচ্ছা, (বিধানের) সমস্ত আদেশের মধ্যে প্রধান কোনটি?” (উত্তরে যীশু বললেনঃ “প্রধান আদেশটি হল এই শােন, ইস্রায়েল ও আমাদের ঈশ্বর প্রভুই একমাত্র প্রভু” আর তােমার ঈশ্বর স্বয়ং প্রভু যিনি তাঁকে তুমি ভালবাসবে তােমার সমস্ত অন্তর দিয়ে, তােমার সমস্ত প্রাণ দিয়ে, তােমার সমস্ত মন দিয়ে, আর তােমার সমস্ত শক্তি দিয়ে।”

দ্বিতীয় প্রধান আদেশটি হল এইঃ “তােমার প্রতিবেশীকে তুমি নিজের মতােই ভালবাসবে। এই দুটির চেয়ে বড় কোন আদেশ আর নেই” । সেই শাস্ত্রী তখন যীশুকে বললেনঃ “ঠিক কথা গুরু, আপনি ঠিকই বলেছেন যে, ঈশ্বর অনন্য। তিনি ছাড়া আর কোন দেবতাই নেই! সমস্ত অন্তর দিয়ে, সমস্ত বুদ্ধি দিয়ে ও সমস্ত শক্তি দিয়ে তাকে ভালবাসা এবং প্রতিবেশীকেও নিজের মতােই ভালবাসা, সে তাে সমস্ত পূর্ণাহূতি ও বলিদানের চেয়ে অনেক ভাল!” তার এই মন্তব্য যে কত সুবিবেচিত, তা লক্ষ্য করে যীশু তাকে বললেন, “আপনি ঐশ রাজ্যে থেকে আর বেশী দূরে নেই” (মার্ক ১২ঃ২৮-৩৩)।

আমি যদি মানুষের ও স্বর্গদূতের ভাষায় কথা বলতে পারি, অথচ আমার অন্তরে যদি থাকে ভালবাসা, তাহলে আমি ঢংঢংগানাে কাঁসর বা ঝনঝনে করতাল ছাড়া আর কিছুই নই! আর আমি যদি প্রাবক্তিক বাণী ঘােষনা করতে পারি! যদি উপলব্ধি করতে পারি সমস্ত রহস্যাবৃত সত্য, জানতে পারি ধর্মজ্ঞানের সমস্ত কথা, যদি আমার অন্তরে থাকে পর্বত সরিয়ে দেবার মতাে পূর্ণ বিশ্বাস, অথচ অন্তরে না থাকে ভালবাসা, তাহলে আমি তাে কিছুই নই! আর আমি যদি আমার সমস্ত কিছু দীনদারিদ্রের মধ্যে বিলিয়ে দিই, এমন কি আমার নিজের দেহও আগুনে সঁপে দিই, অথচ আমার অন্তরে যদি না থাকে ভালবাসা, তাহলে তাতে আমার কোন লাভই নেই!

ভালবাসা নিত্য-সহিষ্ণু, ভালবাসা স্নেহ-কোমল। তার মধ্যে নেই কোন ঈর্ষা। ভালবাসা কখনাে বড়াই করে না, উদ্ধতও হয় না, রুক্ষও হয় না। সে স্বার্থপর নয়, বদমেজাজীও নয়। পরের অপরাধ সে কখনাে ধরেই না। অর্ধমে সে আনন্দ পায়, বরং সত্যকে নিয়েই তার আনন্দ। ভালবাসা সমস্তই ক্ষমার চোখে দেখে ও তার বিশ্বাস সীমাহীন, সীমাহীন তার আশা ও তার ধৈর্য।

ভালবাসার মৃত্যু নেই। প্রাবক্তিক বাণী ঘােষণা? তা তাে একদিন মূল্যহীন হয়ে যাবে। অজ্ঞাত ভাষায় কথা বলা? তা তাে একদিন শেষ হয়ে যাবে। ধর্মীয় জ্ঞান? তা-ও তাে মূল্যহীন হয়ে যাবে, কারণ আমাদের সমস্ত জানা-ই অসম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ আমাদের সমস্ত প্রাবক্তিক বাণী ঘােষণা। কিন্তু যা পূর্ণ, তা যখন আসবে, তখন শিশুর মতাে কথা বলতাম, শিশুর মত ভাবতাম, শিশুরই মতাে বিচার করতাম। কিন্তু যখন মানুষ হয়ে উঠলাম, তখন শিশুর সবকিছুই আমি বাদ দিয়ে দিলাম। তখন আমরা যেন দেখছি দর্পনের মধ্য দিয়ে, ঝাপসা ভাবে; কিন্তু তখন আমরা দেখতে পাব মুখােমুখি হয়ে। এখন আমি জানছি আংশিকভাবে, কিন্তু তখন চিনতে পারব পরিপূর্নভাবে, ঈশ্বর যেমন পরিপূর্ণভাবেই আমাকে চিনেছেন।

আপাতত বিশ্বাস, আশা ও ভালবাসা, এই তিনটিই থেকে যাচ্ছে বটে, কিন্তু ভালবাসা-ই সর্বশ্রেষ্ঠ।” (১ করি ১৩ঃ১-১৩)।