ধর্মপালন – ইসলাম ধর্ম

ধর্মপালন

স্কাউট প্রতিজ্ঞার তিনটি অংশের মধ্যে প্রথম অংশটি হলাে আল্লাহর (সৃষ্টিকর্তার) প্রতি কর্তব্য পালন। তাই স্কাউটরা সর্বপ্রথমেই তার আত্মমর্যাদার উপর নির্ভর করে আল্লাহর প্রতি কর্তব্য পালন করতে যথাসাথ্য চেষ্টা করে। স্কাউটরা নিজ ধর্মের রীতিনীতি মেনে এবং তা পালন করার মাধ্যমে আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তার প্রতি কর্তব্য পালন করে থাকে।


ইসলাম ধর্ম

ইসলাম আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক মনােনীত একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে আল্লাহ প্রদত্ত এ জীবন বিধান যুগে যুগে নবী-রাসূলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে। সর্বশেষ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তা’আলা ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দেন। এজন্য কিয়ামত পর্যন্ত কোন নতুন দ্বীন বা ধর্ম ও নবী আসবেন না। ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হওয়াতে অন্যান্য ধর্মের সাথে এর মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। ইসলাম মানে আত্ম উন্নয়ন করা, আনুগত্য করা, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী আল্লাহর আনুগত্য করাকেই ইসলাম বলে, আর অনুগত ব্যক্তিকে বলা হয় মুসলমান।

ইসলামের মৌলিক বিষয় ৫টি

  1. কালেমা বা ঈমান বা বিশ্বাস।
  2. নামাজ।
  3. সাওম।
  4. যাকাত ও
  5. হজ্জ।

১. ইমান

ঈমান অর্থ বিশ্বাস করা। যেসব বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হয়, তা হলাে :

  • (ক) এক আল্লাহ এবং আল্লাহর ক্ষমতা ও গুণাবলী অনুযায়ী আল্লাহর উপর বিশ্বাস করা। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার ঘােষণা দেয়া।
  • হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে আল্লাহর রাসূল বা দূত হিসেবে বিশ্বাস করা এবং তাঁকে মেনে চলার ঘােষণা দেয়া।
  • পবিত্র কুরআনকে আল্লাহর কিতাব হিসেবে বিশ্বাস করা।
  • পরকালে অর্থাৎ মানুষের মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করা হবে এবং ভাল-মন্দ কাজের বিচার ও ফলাফল অনুযায়ী বেহেশতে বা দোযখে পাঠানাে হবে অন্তরে এই বিশ্বাস ধারণ করা।

ইমানের মূলকথা : মানুষকে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন। এছাড়া গ্রহ নক্ষত্র, পৃথিবী, আসমান-জমীন, পাহাড়-পর্বত, পশুপাখি সবকিছু আল্লাহ তাআলাই সৃষ্টি করেছেন। গাছ-পালা, সাগর-নদী সবই আল্লাহর সৃষ্টি। বিশ্ব প্রকৃতি আল্লাহর নিয়ম মেনে চলে। আল্লাহর নিয়ম-নীতি মেনে চলাকে ইবাদত বলে। ইবাদতের জন্য মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষ আল্লাহর বান্দা বা গােলাম। তাই মানুষকে জীবনের সব বিষয়ে এবং সব সময়ের জন্যই আল্লাহকে মেনে চলতে হবে। আল্লাহর প্রতি ঈমান মানুষকে সাহসী ও সংযমী হতে শিক্ষা দেয়। অন্যায় ও অসত্যকে ঘৃণা ও প্রতিহত করতে উৎসাহিত করে।

২. নামাজ

একজন মুসলমানের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে যে কয়টি জরুরী কাজ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া অন্যতম । নামাজ পড়তে হলে শরীর, পােশাক এবং নামাজের স্থান পবিত্র হতে হয়। নামাজ আমাদেরকে সৌন্দর্যবোেধ ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা শিক্ষা দেয়। নামাজী ব্যক্তি ভাল ও সুন্দর কাজ করার এবং অন্যায়, অসুন্দর কাজে বাধা দেয়ার মানসিক শক্তি পায়। নামাজ শৃঙ্খলারও শিক্ষা দেয়। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা ফরজ।

ফজরের নামাজ : ভােরে সূর্য উঠার পূর্বে দুই রাকাত সুন্নত দুই রাকাত ফরয মােট চার রাকাত নামাজ পড়তে হয়। শরীর ও কাজের উদ্যম সৃষ্টির ক্ষেত্রে ফজরের নামাজ খুবই উপকারী।

যােহরের নামাজ : দুপুরে সূর্য পশ্চিমদিকে ঢলে পড়লে যােহরের নামাজের সময় হয়। যােহরের ওয়াক্তের নামাজের বারাে রাকাত (চার রাকাত সুন্নত, চার রাকাত ফরয, দুই রাকাত সুন্নত, দুই রাকাত নফল)।

আসরের নামাজ : যােহরের নামাজের পর বিকেলে সূর্য ডােবার পূর্ব পর্যন্ত আসরের নামাজ পড়া যায়। আসরের নামাজ আট রাকাত (চার রাকাত সুন্নত, চার রাকাত ফরয)।

মাগরিবের নামাজ : সূর্য ডােবার পর আকাশে লাল আভা থাকা পর্যন্ত মাগরিবের নামাজ পড়া যায়। মাগরিবের নামাজ সাত রাকাত (তিন রাকাত ফরয, দুই রাকাত সুন্নত, দুই রাকাত নফল)।

এশার নামাজ : মাগরিবের নামাজ শেষ হওয়ার পর থেকে শেষ রাত পর্যন্ত এশার নামাজ পড়া যায়। তবে মধ্য রাত্রির পূর্বে পড়াই উত্তম। এশার নামাজ পনের রাকাত (চার রাকাত সুন্নত, চার রাকাত ফরয, দুই রাকাত সুন্নত, দুই রাকাত নফল, তিন রাকাত বেতের)।

জুমআর নামাজ : শুক্রবারে যােহরের নামাজের সময় মসজিদে মহল্লার সবাই একত্রিত হয়ে জামাতের সাথে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয়। নামাজের আগে ইমাম সাহেব খুতবা দেন। এ খুতবা শােনা জরুরী। জুম’আর নামাজের মাধ্যমে পাড়া-প্রতিবেশী সবার সাথে দেখা-সাক্ষাত ও খোজ খবর নেয়ার সুযােগ পাওয়া যায়। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে একসাথে মসজিদে যাওয়া খুবই আনন্দের বিষয়।

সকল নামাজের পূর্বে অযু করতে হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে বা একত্রে মসজিদে আদায় করা উত্তম। জামাতের সাথে নামাজ আদায় করলে ৭০ গুন বেশি সওয়াব পাওয়া যায় । উপরে যা বলা হলাে, ততটুকু নামাজ ছােট-বড় সকলের জন্যই ফরয। বড়রা আরও বেশি করে নামাজ পড়েন। প্রত্যেক স্কাউটকে নিয়মিত নামাজ পড়ার অভ্যাস করতে হবে।

৩. সাওম বা রোজা

সুবহে সাদেক থেকে সূর্য ডুবে যাওয়া পর্যন্ত কোন কিছু খাওয়া ও পান করা থেকে বিরত থাকাকে রােজা বলে।

রােজার মূল লক্ষ্য শরীর ও মনকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি সঞ্চয় করা । মানুষকে ভাল ও উন্নত আচরণের অধিকারী হতে হলে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ও সংযম অর্জন করা জরুরী। বছরে এক মাস রােজা পালন করতে হয়। যুবক বয়সে পৌছলে সবাইকে রােজা পালন করতে হয়। সাত বছর বয়স থেকে ছােটদেরও অভ্যাস করার জন্য কিছু কিছু রােজা পালন করা দরকার । শরীর ও মনের জন্য রােজা খুবই উপকারী।

শবে কদর : রমযান মাসের শেষ দশরাতের মধ্যে যে কোন বিজোড় রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা। তবে ২৭শে রমযানকে শবে কদর বলে অনেকে ধারণা করেন। এ রাতে কুরআন নাযিল শুরু হয়েছিল। এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। এ জন্য এ রাতে আমরা ছােট-বড় সবাই মিলে রাত জেগে ইবাদত করে থাকি। সবাই একসাথে রাত জেগে ইবাদত করার মধ্যে অনেক আনন্দ রয়েছে। অনেক সময় শবে কদর ও শবে বরাত আমাদের মনে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করে।

জুমাতুল বিদা : রমযান মাসের শেষ শুক্রবারকে জুমাতুল বিদা বলে। এদিন মুসমানগণ আল্লাহর নিকট বিশেষভাবে দোয়া প্রার্থনা করেন।

ঈদুল ফিতর : একমাস রােযা রাখার পর মুসলমানদের জন্য ঈদুল ফিতর উৎসব আসে। ঈদ অর্থ খুশি। ছােট-বড়, গরীব-ধনী সকলের জন্য ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়াই ইসলামের শিক্ষা। এ দিনে ছােট-বড়, ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবাই একত্রিত হয়ে জামাতের সাথে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়।

ঈদুল আযহা : জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর ত্যাগের মহিমাকে স্বরণ করে বিশ্ব ব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায় এ দিন আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কুরবানী করেন।

৪. যাকাত

মানুষের মধ্যে মেধা ও বুদ্ধির দিক থেকে পার্থক্য রয়েছে। কারাে বুদ্ধি বেশি, কারাে বা কম । শারীরিকভাবেও কেউ শক্তিশালী, আবার কেউবা দুর্বল। বুদ্ধি ও সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করার পরেও বিভিন্ন কারণে কেউ ধনী হয়, আবার কেউ থাকে গরীব । গরীবদের কল্যাণে ইসলাম ধনীদের জমাননা অর্থের শতকরা আড়াই (২.৫% বা মােট অর্থের চল্লিশ ভাগের একভাগ ভাগ হিসেবে গরীবদের দিতে হয়। কমপক্ষে ৭.৫ ভরি স্বর্ণ এবং ৫২.৫ তােলা রূপা থাকলে এ সম্পত্তি সমূহের যাকাত দিতে হয়।

ফেতরা : সকল সামর্থবান ব্যক্তিকে ফেতরা দিতে হয়। যা সরকার কতৃর্ক প্রতি বছরের গম, খেজুর অথবা কিসমিসের দাম অনুসারে কেজি ৭৫০ গ্রামের মূল্যের ভিত্তিতে নিধারণ করা হয়। প্রত্যেক ফেতরা প্রদানকারী নিজ সামর্থ্যের ভিত্তিতেই ফেতরা পরিশােধ করে। ঈদুল ফিতরের ওয়াজিব নামাজ আদায়ের পূর্বে জন্ম গ্রহণকরা শিশু সহ সকলের ফেতরা পরিশােধ করতে হয়।

৫. হজ্জ

পবিত্র মক্কা নগরীতে আল্লাহর ঘর কা’বা অবস্থিত। পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ) থেকে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত সকল নবী রাসূলই (আঃ)-এ পবিত্র ঘরে আল্লাহর ইবাদত করেছেন। কাবা ঘরের আশে-পাশে যমযম কূপ এবং এর মত কিছু কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। কয়েক কিলােমিটার দূরে মিনা ও আরাফাত নামক পাহাড়ী ময়দানে অনেক নবীর স্মৃতি রয়েছে। যিলহজ্জ মাসের ৭ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত এসব স্থানে নিয়ম অনুযায়ী ইবাদত করাকে হজ্জ বলা হয়।

শারীরিকভাবে সুস্থ নারী-পুরুষ, যাদের যাতায়াতের খরচ বহন করার মত সামর্থ্য আছে, তাদের জন্য হজ্জ করা ফরজ। মানব ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহত্তম সমাবেশ হচ্ছে পবিত্র হজ্জ। হজ্জের মাধ্যমে বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য ও ভালবাসার পরিচয় ফুটে উঠে। হজ্জকে তাই বিশ্ব মুসলিমের মহামিলন মেলা বলা যায়।


ধর্মপালন – ইসলাম ধর্ম – সমাপ্ত